আইন কিভাবে তৈরি হয়

আইন কিভাবে তৈরি হয় ?/ভারতে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সহজ ব্যাখ্যা

আইন কিভাবে তৈরি হয়

ভারতে আইন তৈরির প্রক্রিয়া সংবিধান (Constitution) দ্বারা নির্ধারিত। আইন প্রণয়নের দায়িত্ব সংসদ (Parliament) এবং রাষ্ট্রপতির (President) উপর নির্ভর করে। আইন প্রণয়ন এবং বাতিলের প্রক্রিয়া নতুন আইন প্রবর্তন, সংশোধন, এবং বাতিলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রথমে একটি খসড়া (Draft) প্রস্তুত হয়, যা একটি সংসদীয় কক্ষে (House) উপস্থাপন করা হয়। এরপর এটি অন্য কক্ষে (House) প্রেরিত হয়। বিল (Bill) দুটি কক্ষে পাস হলে রাষ্ট্রপতির (President) সম্মতি (Assent) পাওয়া যায় এবং তা আইনে (Act) পরিণত হয়।

বিলের ধরনসমূহ

ভারতের সংবিধানের (Article 107) অনুযায়ী, অর্ডিনারি বিল (Ordinary Bill) এমন একটি বিল যা সংসদের যে কোনও একটি কক্ষে উপস্থাপন করা যেতে পারে। একটি অর্ডিনারি বিলকে উভয় কক্ষে পাস হতে হয়। যদি উভয় কক্ষ সম্মতি দেয়, তবে এটি সংসদ দ্বারা পাস (Passed) হওয়া একটি বিল হিসেবে গণ্য হয়। যদি একটি কক্ষে বিল প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে রাষ্ট্রপতির (President) নির্দেশে একটি যৌথ অধিবেশন (Joint Sitting) আহ্বান করা হতে পারে। সাধারণভাবে, একটি বিল সংসদে প্ররোগেশনের (Prorogation) কারণে বাতিল হয় না। রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) উপস্থাপিত এবং সেখানে_pending_ থাকা একটি বিল যদি লোকসভায় (Lok Sabha) পুনরায় জমা না হয় তবে বিলটি বাতিল হয়ে যাবে।

একটি বিল মানি বিল (Money Bill) হিসেবে গণ্য হয় যদি এটি সরকারী ঋণ (Loan), কর (Tax), বা রাজস্ব (Revenue) সম্পর্কিত কোনো বিধান নিয়ে হয়। মানি বিলের সংজ্ঞা সংবিধানের (Article 110) অধীনে নির্ধারিত। মানি বিল রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) উপস্থাপন করা যাবে না। লোকসভায় (Lok Sabha) এটি প্রণীত হয় এবং রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) সুপারিশের জন্য পাঠানো হয়। রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) সুপারিশ দেওয়ার জন্য 14 দিন সময় আছে। রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) সুপারিশ গ্রহণ করা হলে, বিলটি উভয় কক্ষে পাস হিসেবে গণ্য হয় এবং রাষ্ট্রপতির (President) সম্মতি পাওয়ার জন্য পাঠানো হয়। রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) সুপারিশ প্রত্যাখ্যাত হলে, বিলটি উভয় কক্ষে পাস হিসেবে গণ্য হয়। যদি রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) বিলটি 14 দিনের মধ্যে ফেরত না আসে তবে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উভয় কক্ষে পাস হয়ে যাবে।

একটি ফিনান্সিয়াল বিল (Financial Bill) দুটি ধরনের হয়ে থাকে। প্রথম ধরনের ফিনান্সিয়াল বিল (Financial Bill Type I) অর্থনৈতিক বিষয় (Economic Matters) সহ সাধারণ আইন (General Legislation) নিয়ে হয়। এটি লোকসভায় (Lok Sabha) প্রস্তাবিত হতে হয় এবং রাষ্ট্রপতির (President) প্রাক-সুপারিশ (Prior Recommendation) প্রয়োজন হয়, তবে কর হ্রাস বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না।

ফিনান্সিয়াল বিল টাইপ (II) (Financial Bill Type II) কনসলিডেটেড ফান্ড (Consolidated Fund) থেকে ব্যয় (Expenditure) সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে থাকে, তবে Article 110 এর অধীনে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি একটি সাধারণ বিল (Ordinary Bill) এবং রাষ্ট্রপতির (President) প্রাক-সুপারিশ (Prior Recommendation) প্রয়োজন হয় না, তবে যৌথ অধিবেশনের (Joint Sitting) জন্য রাষ্ট্রপতির (President) বিবেচনার (Consideration) প্রয়োজন।

সংবিধানের (Article 368) অধীনে, সংসদ (Parliament) আমাদের সংবিধান (Constitution) সংশোধনের ক্ষমতা রাখে। রাজ্য বিধানসভা (State Legislatures) এর এই ক্ষমতা নেই। সংবিধান সংশোধন বিল (Constitutional Amendment Bill) উভয় কক্ষে বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Special Majority) নিয়ে পাস হতে হয়। বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানে হল, মোট আসনের দুই-তৃতীয়াংশের (Two-Third Majority) অধিকাংশ। কিছু ক্ষেত্রে, যখন একটি সংশোধন কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য (Federal Characteristics) পরিবর্তন করে, তখন এটি রাজ্য বিধানসভাগুলির (State Legislatures) দ্বারা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Simple Majority) প্রয়োজন।

সংবিধান সংশোধন সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Simple Majority) নিয়ে

  • যে সমস্ত সংবিধান সংশোধন সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Simple Majority) নিয়ে করা হয় তা Article 368 এর আওতায় আসে না। সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানে হল, মোট আসনের 50%। এই সংশোধনগুলি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পরিবর্তন করতে পারে:
  • নতুন রাজ্য গঠন বা প্রতিষ্ঠা
  • রাজ্যগুলির ক্ষেত্র, সীমানা বা নাম পরিবর্তন
  • রাজ্য বিধানসভায় কাউন্সিলের সৃজন বা বিলুপ্তি
  • সংসদের সদস্যদের বেতন ও ভাতা

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা (Ordinance Making Power of The President)

  • সংবিধানের (Article 123) অধীনে, রাষ্ট্রপতির (President) আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে, তবে সংসদ (Parliament) অধিবেশনে না থাকলে। সংসদ অধিবেশন শুরু হলে, রাষ্ট্রপতির (President) দ্বারা প্রণীত আইন উভয় কক্ষে পাস হওয়া প্রয়োজন।

যৌথ অধিবেশন (Joint Sitting) 

সংবিধানের (Article 108) অধীনে, উভয় সংসদ কক্ষে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা যেতে পারে যখন একটি বিল এক কক্ষে প্রত্যাখ্যাত হয় বা উভয় কক্ষের মধ্যে বিভাজন ঘটে।

উপসংহার

আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি (President), লোকসভা (Lok Sabha), রাজ্যসভা (Rajya Sabha), এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য বিধানসভা (State Legislatures) জড়িত থাকে। বিল (Bill) উভয় কক্ষে পাস হলে এবং রাষ্ট্রপতির (President) সম্মতি (Assent) প্রাপ্ত হলে এটি আইনে (Act) পরিণত হয়। অর্ডিনারি বিল (Ordinary Bill) উভয় কক্ষে উপস্থাপন করা যেতে পারে, তবে মানি বিল (Money Bill) এবং ফিনান্সিয়াল বিল টাইপ (I) (Financial Bill Type I) কেবল লোকসভায় (Lok Sabha) উপস্থাপন করা যায়। সংসদীয় বিতর্ক (Parliamentary Debate) আইনের প্রণয়ন প্রক্রিয়ার অংশ এবং যৌথ অধিবেশন (Joint Sitting) খুবই বিরল।

Recommended Post

ভারতীয় সংবিধান: ভারতীয় সংবিধানের গঠন ও কার্যক্রম সহজ ভাষায়

ভারতীয় সংবিধানের মূল বিষয় এবং এর কার্যক্রমকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংবিধান কীভাবে ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব প্রদান করে, এবং দেশের শাসনতন্ত্রকে দৃঢ় করে - এই প্রবন্ধে এই বিষয়গুলির উপর স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়েছে। যারা সংবিধান সম্পর্কে আরও জানতে চান, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স।

Read More

Recommended Post

আইন ও আইনের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এক সমৃদ্ধ যাত্রা

আইন ও তার ইতিহাসের বিবর্তন জানুন - প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত। এই প্রবন্ধটি আইনশাস্ত্রের ছাত্র এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি সমৃদ্ধ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে, যেখানে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট থেকে আইন কীভাবে বিকশিত হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।

Read More

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top